যে প্রক্রিয়ায় বিসিবি সভাপতি হতে পারেন ফারুক আহমেদ
নিজস্ব প্রতিবেদক : লম্বা সময় পর পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের। দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় পরিবর্তনের পর থেকেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের এক যুগের চেনা চিত্রটা বদলেছে অনেকখানি। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর থেকেই আড়ালে আছেন ক্রিকেট বোর্ডের বর্তমান সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। যদিও নিজের পদ ছেড়ে দেয়ার কথা এরইমাঝে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
নানা মাধ্যমের খবর বিসিবিতে আসছেন ফারুক আহমেদ। জোর গুঞ্জন, জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ফারুক আহমেদ বোর্ড সভাপতি হতে পারেন। বোর্ড সভাপতি হওয়ার আগে পরিচালক হতে হয় এবং পরিচালক হতে হলে কাউন্সিলরশিপ থাকতে হয়।
বিষয়টি নিজেই নিশ্চিত করেছেন জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক। ফারুক বলেন, ‘আমাকে বোর্ডে কাজ করার কথা বলা হয়েছে। আমাকে বলেছে আমি পজিটিভভাবে নিয়েছি। আগে একসময় বোর্ড থেকে রিজাইন করেছিলাম, এখন যদি পরিবেশ ভালো হয়। নিজের মতো কাজ করতে পারি তাহলে কেন নয়। ক্রিকেটকে তো ভালোবাসি। ক্রীড়া উপদেষ্টার সঙ্গে তো মিটিং হচ্ছে।’
বিসিবি সভাপতি হওয়ার দৌড়ে আপনার নাম শোনা যাচ্ছে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পেয়েছেন কি না এমন প্রশ্নে ফারুক বলেন, ‘আমাকে সভাপতির জন্য এখনো প্রস্তাব দেওয়া হয়নি। তাই এখনই বলতে পারছি না। সভাপতি হওয়ার প্রস্তাব প্রস্তাব পাইনি, জিজ্ঞেস করেছে কাজ করব কি না। সভাপতি হবো কি না যখন প্রস্তাব দেবে তখন চিন্তা করব।’
ফারুক সরাসরি সভাপতি পদের কথা না বললেও হলেও দুইয়ে দুইয়ে চার মেলাতে খুব একটা কষ্ট হওয়ার কথা নয়। বাংলাদেশের ক্রিকেটে নির্বাচক হিসেবে সফল ছিলেন। ক্রিকেটকে দেখেছেন কাছ থেকেই। শূন্য পদ হিসেবে বিসিবি সভাপতি পদেই এখন আলোচনা চলছে সবচেয়ে বেশি। ফারুকের জন্যই তাই বিসিবি সভাপতির পদ অপেক্ষা করছে, এমনটা বলা যেতে পারে।
ফারুক আহমেদ এরইমাঝে সাবেক অধিনায়ক কোটায় বিসিবির কাউন্সিলর। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিসিবি সভাপতি ৫ জন সাবেক অধিনায়ককে কাউন্সিলর মনোনয়ন করতে পারেন। ফারুক আহমেদ, হাবিবুল বাশার সুমন তারা এই ক্যাটাগরিতে কাউন্সিলর। কাউন্সিলরশিপ থাকলে যে কেউ নির্বাচন করার অধিকার রাখেন। পাপনের আমলে বিসিবির গঠনতন্ত্র বার তিনেক সংশোধন হলেও পাঁচ অধিনায়ক কাউন্সিলর হয়েও সি ক্যাটাগরিতে নির্বাচন করতে পারেন না এটি পরিবর্তন হয়নি।
ক্যাটাগরি সি থেকে বিসিবি পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজন। এই ক্যাটাগরি থেকে সুজন পদত্যাগ করলেও ফারুকের তার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার সুযোগ নেই। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে পরিচালকদের চারটি ক্যাটাগরি রয়েছে। একটি জেলা-বিভাগ (১০ জন) , ক্লাব ( ১২) , সি ক্যাটাগরি – সাবেক খেলোয়াড়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ( ১ জন)। নির্বাচিত এই তিন ক্যাটাগরির সঙ্গে যুক্ত হন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মনোনীত ২ জন।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কোটায় ২ জন পরিচালক আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি ও জালাল ইউনুস। এই দুই জনের একজন পদত্যাগ করলে সেখানে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ফারুককে সরাসরি মনোনয়ন দিতে পারবে।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ অন্য সব ফেডারেশনে ৫ জন কাউন্সিলর মনোনয়ন দেয়। ক্রিকেট বোর্ডেও পাঁচ জন। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ অন্য ফেডারেশনে কাউন্সিলর তালিকার বাইরে থাকা ২ জনকে নির্বাহী কমিটির সদস্য করতে পারে। ক্রিকেট বোর্ডঅবশ্য প্রভাব খাটিয়ে একটু ঘুরিয়েছেন। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরো কাউন্সিলর তালিকার মধ্যে যে কাউকে পরিচালক হিসেবে মনোনয়ন দিতে পারে।
ক্রিকেট বিশ্লেষক নাজমুল আবেদীন ফাহিমেরও বোর্ডে আসার কথা শোনা যাচ্ছে। তিনি বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাউন্সিলর। সর্বশেষ নির্বাচনে খালেদ মাহমুদ সুজনের কাছে হেরেছেন। সুজন পদত্যাগ করলে সি ক্যাটাগরিতে পুনরায় নির্বাচন হলে তিনি আবার প্রার্থী হতে পারেন। অথবা জালাল ও ববি দুই জনই পদত্যাগ করলে সেখানে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কোটায় স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন।
এই দুই জন ছাড়া সৈয়দ আশরাফুল হক ও আরো কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে। তারা বিসিবির কাউন্সিলর নন। কাউন্সিলর না হওয়ায় তাদের বোর্ডে আসা একটু জটিল। সেক্ষেত্রে পরিচালকগণ পদত্যাগ করলেই হবে না। সংশ্লিষ্ট ক্লাব, সংস্থা থেকে কাউন্সিলরশীপ প্রত্যাহার করতে হবে। এরপর সেখানে নতুন কাউন্সিলরশীপ নিয়ে পরবর্তীতে নির্বাচন করতে হবে। ক্রিকেট বোর্ডের গঠনতন্ত্রে ক্লাব, জেলার কাউন্সিলরশিপ পরিবর্তন নিয়ে ব্যাখ্যা রয়েছে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাউন্সিলরশীপ পরিবর্তনের বিষয়টি সুস্পষ্ট নয়।