আরও চার জেলায় মামলা মন্ত্রী-এমপিসহ আসামি ১৩০০

সময়: 10:01 pm - August 26, 2024 | | পঠিত হয়েছে: 25 বার

নিজস্ব প্রতিবেদক

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশজুড়ে নেতা-কর্মীদের নামে মামলা অব্যাহত রয়েছে। গতকাল সোমবারও (২৬ আগস্ট) রাজশাহী, সিলেট, গাইবান্ধা ও নাটোরে সাতটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় একজন সাবেক মন্ত্রী, একজন সাবেক প্রতিমন্ত্রী, ছয়জন সাবেক সংসদ সদস্যসহ আওয়ামী লীগের অন্তত ১ হাজার ৩০০ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৭৬ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা আসামি প্রায় ৮০০ জন।

আমাদের ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

রাজশাহী: গত রবিবার রাতে গোদাগাড়ী থানায় দুটি মামলা রেকর্ড হয়েছে বলে গতকাল নিশ্চিত করেছেন গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান। মামলা দুটিতে সাবেক এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগের দেড় শতাধিক নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে।

প্রথম মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, সাবেক এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর নির্দেশে উপজেলা সদর ডাইংপাড়া মোড়ে গত ৫ আগস্ট আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও গুলি করা হয়। এই ঘটনায় বেশ কিছু আন্দোলনকারী আহত হন। ওমর ফারুক ছাড়াও এ মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৪৩ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা শতাধিক নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে।

অন্যদিকে দ্বিতীয় মামলাটি করা হয়েছে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গোদাগাড়ীর লস্করহাটি কেন্দ্রে জাল সিল মারার অভিযোগে। মামলার বাদী লস্করহাটি এলাকার তসিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। এ মামলায় সাবেক এমপি ওমর ফারুকসহ আওয়ামী লীগের ২২ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা আরও ৫০-৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

ওসি আতাউর রহমান বলেন, ‘আসামিরা সবাই পলাতক রয়েছেন। কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তবে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’

সিলেট: সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে সিলেটে আরও তিনটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল মহানগরীর চারাদীঘির পাড় এলাকার রুবেল আহমেদ (৩৫) বাদী হয়ে সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা করেন। এ মামলায় আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিসহ ৮৬ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা আরও ৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলাটিতে গত ৪ আগস্ট সিলেট উইমেনস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে হামলা ও গুলির অভিযোগ তোলা হয়।

আসামিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, দলটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও মৌলভীবাজার-২ আসনের সাবেক এমপি শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সিলেট সিটি করপোরেশনের সদ্য সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সিলেট-৩ আসনের সাবেক এমপি হাবিবুর রহমান হাবিব, সুনামগঞ্জ-১ আসনের সাবেক এমপি রনজিত সরকার।

অন্যদিকে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায় সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে প্রধান আসামি করে দুটি হত্যা মামলা হয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত ঢাকা দক্ষিণ ইউনিয়নের নিশ্চিন্ত গ্রামের তৈয়ব আলীর ছেলের স্ত্রী খাদিজা মাহিরুল বাদী হয়ে রবিবার গোলাপগঞ্জ মডেল থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় নাহিদসহ গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মঞ্জুর কাদির শাফি, পৌরসভার সাবেক মেয়র আমিনুল ইসলামসহ মোট ১১৯ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ১১০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

অন্য মামলাটি করেন ঢাকা দক্ষিণ ইউনিয়নের দত্তরাইল গ্রামের নিহত মিনহাজের (২৩) বড় ভাই সাঈদ আলম। এ মামলায় ৫৫ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা আরও ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

নাটোর: নাটোর সদর থানায় সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত মেহেদী হাসান রবিনের মামা সোহেল রানা গতকাল দুপুরে মামলাটি করেন। এ মামলায় আওয়ামী লীগের ১৩৭ জন নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

মামলার অভিযোগে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট প্রধান আসামি সাবেক এমপি শফিকুল ইসলামের নির্দেশে শহরের উত্তর বড়গাছা বড় মোড় এলাকা থেকে মেহেদী হাসান রবিনকে তুলে নেওয়া হয়। পরে তাকে শহরের কান্দিভিটুয়া মহল্লায় প্রধান আসামির বাড়িতে আটকে রাখা হয়। একপর্যায়ে সেই ঘরে আগুন দিয়ে পালিয়ে যান এমপিসহ তার সহযোগীরা। এ সময় স্থানীয়রা রবিনকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সেখানে ৭ আগস্ট ভোরে মারা যান রবিন।

গাইবান্ধা: গাইবান্ধায় জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ ও সাবেক সংসদ সদস্যসহ আওয়ামী লীগের ৩৬৪ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গতকাল দুপুরে গাইবান্ধা জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক আবদুল হাই বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন। মামলাটিতে গত ৪ আগস্ট গাইবান্ধা জেলা বিএনপি কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগ তোলা হয়েছে।

এ মামলায় সাবেক হুইপ মাহবুবারা বেগম ও গাইবান্ধা-২ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ সারোয়ার কবির, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুর জামান, সহসভাপতি শাহ মাসুদ জাহাঙ্গীর কবিরসহ আওয়ামী লীগের ১১৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ২০০-২৫০ জনকে। সদর থানার ওসি মাসুদ রানা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর