কোটি টাকার বিনিময়ে আ.লীগ নেতা পুনঃবাসনের অভিযোগ বিএনপি নেতা আইয়ুবের বিরুদ্ধে

যশোর প্রতিনিধি- রিতা – বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব কোটি টাকা চাঁদার বিনিময়ে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যানদের আশ্রয় প্রদান করছেন। তার আসনের প্রতিটা ইউনিয়নে খোঁজ নিয়ে জানা যায়- টিএস আইয়ুব ৫ আগস্টে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর চিটিং মামলায় জেল থেকে বের হয়ে অত্র এলাকার ৯ টি ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা চাদা নেন।
তাদের পুনঃবাসন এবং নিরাপত্তা প্রদানের নিশ্চতয়ার জন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে বুঝে নেন ৫ লক্ষ, ৭ লক্ষ অথবা ১০ লক্ষ টাকা। সব মিলিয়ে কোটি টাকার চাঁদা নিয়েছে বলে অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। এছাড়া, যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার জামদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম তিব্বতের এমন বক্তব্য গত শনিবার রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এক মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের এই ভিডিও নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা চলছে।
টাকার বিনিময়ে তিনি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সেলটার দিচ্ছেন বলে দাবি করছেন এলাকার ত্যাগি বিএনপি নেতারা। এলাকাবাসী সবাই জানলেও হামলা মামলার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। স্থানীয় বিএনপির, একটি বিশেষ সূত্র এসব তথ্য জানা গেছে। বিএনপি’র প্রবীণ নেতা ও একাধিক নেতারা বলছেন, টিএস আইয়ুব অত্র এলাকার এক সময় ব্যাপক জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। কিন্তু ৫ আগস্টের পর তিনি বিভিন্ন দুর্নীতি ও অপকর্মের সাথে জড়িত। তার বিরুদ্ধে কথা বললে নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা পাড়া মহল্লায় গিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানি ও নির্যাতন নিপীড়ন করছে। নিজ এলাকায় তিনি এক রাষ্ট্রতন্ত্র করে ফেলেছেন।
বিএনপির এই নেতাকে এমপি বানাতে আওয়ামী লীগ নেতাদের একাট্টা হওয়ার ঘোষণায় নিজ দলের নেতাকর্মীরা যেমন বিব্রত; তেমনি বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যেও। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, দলের দুর্দিনে দলের আর্দশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন তিব্বত। আর বিএনপি নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পুর্নবাসনে ব্যস্ত খোদ বিএনপি নেতারা। বিএনপি নেতাদের ছত্রচ্ছায়াতেই আওয়ামী লীগের নেতারা মাঠে নামছে।
স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার জামদিয়া ইউনিয়নের জয়ারামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে গত ৪ ও ৫ মার্চ দুদিনব্যাপী বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও কৃষক দলের যুগ্ম সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব। প্রথম দিন রাতের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জামদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম তিব্বত। তার বক্তব্য তিনি উপরোক্ত কথা বলেন। এছাড়াও তিব্বত তার বক্তব্য আরো বলেন, ‘বাঘারপাড়ার শেষ ঠিকানা হচ্ছে টিএস আইয়ূব। আগামীতে ৯টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তার নেতৃত্বেই চলবে।’
আরিফুল ইসলাম তিব্বতের এ বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা ভাইরাল হয়। তার নিজ দলের নেতাকর্মীরা তার বিপক্ষে বিভিন্ন মন্তব্য করতে থাকেন। আজ দিনভর উপজেলার বিভিন্ন আড্ডায় ও চায়ের দোকানে এ বিষয়টিই ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। অনেকেই অন্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে ফোন করে জানতে চেয়েছেন, আসলেই সব চেয়ারম্যানরা টিএস আইয়ূবের সাথে একাত্ম হয়েছেন কিনা।
এদিকে, আরিফুল ইসলাম তিব্বত জামদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বাঘারপাড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক। বাঘারপাড়া উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ৭টিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বিজয়ী হন। এর মধ্যে আরিফুল ইসলাম একজন। রায়পুর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র ও বন্দবিলা ইউনিয়নে নির্বাচিত হয় ওয়ার্কাস পার্টির প্রার্থী।
বন্দবিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সবদুল হোসেন খান জানিয়েছেন, আরিফুল ইসলাম তিব্বত যে বক্তব্য দিয়েছেন তা তার নিজস্ব মতামত। বাঘারপাড়ায় ইউপি চেয়ারম্যানদের কোন বৈঠকে টিএস আইয়ূবের সাথে একাত্মতা প্রকাশের ঘোষণা হয়নি।
দোহাকুলা ইউপি চেয়ারম্যান আবু মোতালেব তরফদার জানান, ‘তিব্বত যখন বক্তব্য দিয়েছে তখন সে সুস্থ ছিল কিনা আমার সন্দেহ হয়। টিএস আইয়ূব একটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে আছেন। ইউনিয়ন পরিষদের কাজে কর্মে তার সাথে যোগাযোগ করা বা একসাথে কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার বিষয়টি ঘটতেই পারে। তার মানে এই নয় যে, ঘোষণা দেবেন বাঘারপাড়ার সব চেয়ারম্যানরা টিএস আইয়ূবের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।’
বন্দবিলা ইউপি চেয়ারম্যান সবদুল হোসেন খান জানিয়েছেন, ‘বাকি ৮ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা তিব্বতের ওই বক্তব্যের আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ করবেন।’
এ বিষয়ে জামদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অভিযুক্ত আরিফুল ইসলাম তিব্বত জানিয়েছেন, ‘অনুষ্ঠানের প্রথম দিন বিকেলে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোলযোগ হয়। প্রায় তিন ঘন্টা অনুষ্ঠান বন্ধ ছিল। সন্ধ্যায় পরিস্থিতি সামাল দিতে আমি ওই বক্তব্য দিয়েছি।’
এদিকে, বিএনপি নেতাকে এমপি বানাতে আ. লীগ নেতার একাট্টা হওয়ার ঘোষণায় বিব্রত বিএনপির নেতাকর্মীরা। একই সাথে সমালোচনার সৃষ্টি হচ্ছে। উপজেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাসুদ আলম টিপু বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতারা জনরোষে পড়ার ভয়তে সামনে আসছে না। অথচ বাঘারপাড়ার সকল চেয়ারম্যানরা অফিস করছে। ঐসব চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে টিএস আইয়ূব মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছে এবং বিএনপিতে পুর্নবাসন করছে বলেই তারা প্রকাশ্যে তার হয়ে কাজ শুরু করছে। আওয়ামী লীগের নেতারা টিএস আইয়ূবের পক্ষে কাজ করায় আমরা বিব্রত লজ্জাবোধ করছি।’
এই বিষয়ে বিএনপি নেতা টিএস আইয়ূবের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
পৌর বিএনপির সভাপতি আব্দুল হাই মনা বলেন, ‘তিব্বতের বক্তব্য তার অনিয়ম দুনীর্তি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। আইযূবের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেই সে পরিষদ চালাচ্ছে। এতে আমরা বিব্রত। দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ। দলের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জায়গা দেওয়াতে অনেক বিএনপি নেতারা রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রিয় হতে চাইছেন।’