মির্জাগঞ্জে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ
মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা: পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার সুবিদখালী সরকারি ডিগ্রী কলেজে রাজনৈতিক প্রভাব, নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে উঠেছে। অধ্যক্ষের কক্ষ থেকে কোন কাগজপত্র কেউ অন্যত্র সরিয়ে নিতে না পারে সে লক্ষ্যে গত রবিবার তালা ঝুলেিয় দিয়েছে ছাত্র-শিক্ষক ও বৈষম্য ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। পরে বৈষম্য ছাত্র আন্দোলনের নেতা ও ছাত্রদের নিয়ে কলেজ মিলনায়তনে শিক্ষকদের এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। কলেজের এ সকল নানা দুর্নীতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে বিভিন্ন পোষ্ট দেখা গেছে। কলেজটি ২০১৮ সালে জাতীয় করনের পরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ আসাদুজ্জামান গত ৬ বছের প্রায় ১২ কোটি(সম্ভব্য) আত্মসাত করেছে বলে বৈষম্য ছাত্র আন্দোলনের একাধিক নেতারা ফেইসবুকে পোষ্ট করেন।
সূত্রে জানা যায়,কলেজের দুর্নীতিনহ নানা অভিযোগ পেয়ে গত ১৮ আগস্ট বৈষম্য ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ও উপজেলা সমন্বয়ক মোঃ সাইফুল ইসলাম সিয়ামসহ ছাত্ররা কলেজের অধ্যক্ষের কাছে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চান এবং ১৮ তারিখ রবিবার কলেজে অধ্যক্ষ, শিক্ষক, ছাত্র-সুধিজনকে উপস্থিত থাকার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে পোষ্ট করেন বৈষম্য ছাত্র আন্দোলনের নেতা। কিন্তু রবিবার ১৮ আগস্ট ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কলেজে উপস্থিত না হয়ে অসুস্থতার কারন দেখিয়ে একটি ছুটির আবেদন পাঠিয়ে দেন। পরে কলেজের শিক্ষকমন্ডলি বৈষম্য ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের নিয়ে এক আলোচনা করেন কলেজ মিলনায়তে। বৈষম্য ছাত্র আন্দোলনের নেতারা অধ্যক্ষের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির ক্ষতিয়ান তুলে ধরেন শিক্ষকমন্ডলির কাছে।
এতে এক বছরে সম্ভব্য হিসেব অনুযায়ী ১ কোটি ৯৭ লক্ষ ৭১ হাজার ৭৫০ টাকার হিসেব তুলে ধরেন এবং ৬ বছরে ১১ কোটি ৮৬ লক্ষ ৩০ হাজার ৫০০ টাকার অভিযোগ পেয়েছেন বৈষম্য ছাত্র আন্দোলনের ছাত্ররা। পরে সভায় অধ্যক্ষ অনুপস্থিত থাকায় কলেজের সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে বাবু রসিকলাল স্যারকে ভারপ্রাপ্তরে দায়িত্বে দেন। আরো অভিযোগ করা হয়, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কলেজে দলীয়করণ, বিভিন্ন পরিক্ষার নামে অতিরিক্ত ফি আদায় করেন ওই অধ্যক্ষ। কলেজের উন্নয়নের নামে জেলা পরিষদের বরাদ্ধকৃত টাকা আত্মসাৎ করেছেন। নিজ ক্ষমতা বলে কলেজের মধ্যে অধ্যক্ষ নিজেই একটি বলায় সৃষ্টি করেন। এর বাইরে কেউ যেতে পারেনা এবং কোন কিছু বলতেও পারেন না অন্য শিক্ষকরা।
সুবিদখালী সরকারি কলেজের অফিস সহকারী মোঃ আবদুর রাজ্জাক বলেন, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদানের পরে অফিসিয়াল কোন কাজ আমাকে তিনি দেননি। কলেজে খন্ডকালীন লোক নিয়োগ করে কাজ করিয়েছেন। তিনি নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করার জন্য অতিরিক্ত লোক নিয়োগ করেন। বৈষম্য ছাত্র আন্দোলনের ছাত্ররা অধ্যক্ষের নানা অণিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ছুটির আবেদন পাঠিয়ে দিয়েছেন। কয়েক বছর কলেজটিকে কুক্ষিগত করে রেখেছিলেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। তিনি অনিয়ম করে নিজের ইচ্ছেমতো প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করছেন।
বৈষম্য ছাত্র আন্দোলনের উপজেলা সমন্বয়ক মোঃ সাইফুল ইসলাম সিয়াম বলেন, আমরা আজ সোমবার কলেজে গিয়েছিলাম স্যার আসছেন কিনা জানতে। কিন্তু তিনি আসেন নি। তাঁর মুঠোফোনে কথা হলে তিনি(স্যার) বলেন, ছাত্রদের মুখোমুখি হতে চান না তিনি। তবুও আমারা স্যারের সামনাসামনি কথা বলার চেস্টা করবো। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষকরা জানান, দলীয় রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের চেয়ারে বসে আধিপত্য বিস্তার করে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
শিক্ষকদের নির্যাতনের একটা সীমা থাকে। অধ্যক্ষের কক্ষে ভিতরে কোন কাগজপত্র সরাতে না পারে তাই কয়েকদিন যাবৎ অধ্যক্ষের কক্ষে তালা বদ্ধ রয়েছে। আমারা মানসিক ভাবে শিক্ষকরা নাখস। ২০১৮ সালে ৬ ফেব্রুয়ারী থেকে ভারপ্রাপ্তের অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেয়ার পরে কলেজের কোন হিসাব-নিকাশ কারো কাছে নেই। তিনি নিজ ক্ষমতা বলে কলেজটি পরিচালনা করেন। সাবেক অধ্যক্ষ স্যার অবসরে যাওয়ার পরে কলেজ ফান্ডে টাকা রেখে যান তা তিনি ভূয়া ভাউচার করে উত্তোলন করেন অধ্যক্ষ। ২০২৩ সালের ২৭ নভেম্বর সদ্য সরকারি হিসেবে যোগদানের দিন সকল শিক্ষদের কাছ থেকে টোকেনের মাধ্যমে অর্থ নেন অধ্যক্ষ।
গত ১৮ আগস্ট কলেজে অধ্যক্ষ না আসায় তাঁর মনোনীত দর্শন বিভাগের প্রভাষক মোঃ গোলাম কিবরিয়াকে দায়িত্ব দেন কিন্তু বিক্ষুব্ধ ছাত্র-শিক্ষক ও বৈষম্য ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের তোপের মুখে বিধি মোতাবেক কলেজের সিনিয়র শিক্ষক বাবু রশিক লাল দাস স্যারকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয়া হয়।
এ বিষয়ে সুবদিখালী সরকারি ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ আসাদুজ্জমান বলেন, আমি কোনও অন্যায় করিনি। আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে এসব ভিত্তিহীন, বানোয়াট। কলেজে ছাত্ররা প্রত্যেকে কলেজ একাউন্টে টাকা জমা দেয়। এখানে অনিয়ম করার কোন সুযোগ নেই। অন্যায়কে প্রশ্রয় না দেয়ার কারনে তারা এটা করছে।
কলেজের সিনিয়র শিক্ষক বাবু রশিক লাল দাস বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্ররা গত ১৫ আগস্ট কলেজে এসে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্যারের কাছে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চান। পরে ছাত্র আন্দোলনের নেতারা অধ্যক্ষেকে সময় দেন ও অনিয়ম হয়েছে কিনা তা ১৮ আগস্ট দেখার জন্য বলেন। কিন্তু অধ্যক্ষ কলেজে না আসলে ওইদিনই রবিবার কলেজের ছাত্র-শিক্ষক ও ছাত্ররা মিলে মৌখিক ভাবে আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ তরিকুল ইসলাম জানান, বিষয়টি আমি অবগত না। তবে কলেজে যদি কোন অনিয়ম হয়ে থাকে তাহলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।